শিপন পাল ::
দেশে হেপাটাইটিস আক্রান্তের সংখ্যা এক শতাংশের কম। কিন্তু মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১৮ শতাংশের মতো।
সবচেয়ে বড় কথা হলো রোহিঙ্গারা জানেন না হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস কি জিনিস। রোহিঙ্গাদের অনিয়ন্ত্রিত জন্মহার বর্তমানে টক অব দ্যা টাউনে। তার উপর বর্তমান সময়ে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসের মতো একটি রোগে ১৮ শতাংশের মতো রোহিঙ্গা আক্রান্ত হওয়ায় কক্সবাজার জেলা ঝুঁকিতে ফেলেছে বলে মনে করেন সচেতন মহল।
লিডার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলীর বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, ‘মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ১৮ শতাংশই হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্ত।”
তিনি ওই প্রতিবেদন আরও জানান, ‘বাংলাদেশে এক শতাংশের নিচে থাকলেও রোহিঙ্গাদের আক্রান্তের হার অনেক বেশি। এই জন্য ডি সেন্ট্রালাইজেশন করে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।”
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, হেপাটাইটিস ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে প্রধান শর্ত হচ্ছে সচেতনতা। যেগুলো রোহিঙ্গাদের নেই বললেই চলে। হেপাটাইটিস ‘এ’ ও ‘ই’ ভাইরাস সাধারণত ওই ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের মল, তার ব্যবহৃত পানি ও খাবারের মধ্যে ছড়ায়।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আরও জানান, হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাস মূলত রক্তের মাধ্যমে এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মাধ্যমে ছড়ায়। এছাড়াও জন্মের সময়ও মায়ের শরীর থেকে বাচ্চার শরীরে, অনিরাপদ যৌন সংসর্গের মাধ্যমে এবং টুথব্রাশ, নেইল কাটার, রেজারের মাধ্যমেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে থাকে। আর এই বিষয়গুলো নিয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে কোন সচেতনতা নেই। তাই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যেহেতু এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি তাই তাদের মধ্যে এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো দরকার।
সচেতন মহলের অনেকের দাবি, রোহিঙ্গারা বর্তমানে কক্সবাজার জেলার জন্য বিষফোঁড়া। স্বাস্থ্য নিয়ে তাদের মধ্যে কোন সচেতনতা না থাকায় তার চাপ পড়ছে স্থানীয়দের উপরও।
রোহিঙ্গারা জেলায় মাদক, খুন, অপহরণ, ধর্ষণ সহ নানান অপকর্ম করে যাচ্ছে। তারা এক প্রকার অপ্রতিরোধ্য। তাদের কারণে কক্সবাজারের আইন-শৃংখলা বিনষ্ট হচ্ছে। বাড়ছে মামলা-মোকদ্দমা। তার উপর প্রভাব বাড়ছে রোগ ব্যাধির। এসব রোগ ব্যাধি প্রভাব জেলার স্থানীয়দের উপরও পড়ছে।
শরণার্থী ও স্থানীয়দের জন্য ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ’ শীর্ষক একটি গবেষণায় জানা গেছে, কক্সবাজারে অবস্থানরত রোহিঙ্গা নারীদের মধ্যে প্রতি ৪ জনে ১ জনেরও বেশি এই ভাইরাসে আক্রান্ত। রোহিঙ্গা নারীদের মধ্যে ২৬ শতাংশ, পুরুষদের মধ্যে ১৮ শতাংশ এবং অন্তঃসত্ত্বাদের মধ্যে ৮ শতাংশের এইচসিভি পজিটিভ। বাংলাদেশের নাগরিকদের তুলনায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে এইচসিভি সংক্রমণ ১৮ গুণ বেশি।
লিভারের রোগ প্রতিরোধ, চিকিৎসা, শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান এনএলএফবি কক্সবাজারের রোহিঙ্গাদের হেপাটাইটিস বি ও হেপাটাইটিস সি এর প্রাদুর্ভাব নিয়ে ২টি গবেষণা পরিচালনা করে। ২০১৭ সালে ৩০০ জন অন্তঃসত্ত্বা নারীর ওপর এবং ২০১৯ সালের ২ হাজার সাধারণ রোহিঙ্গার ওপর গবেষণা চালানো হয়। এতে হেপাটাইটিস সি ছাড়াও, ৯ শতাংশ পুরুষ, ৫ শতাংশ নারী এবং ৩ শতাংশ অন্তঃসত্ত্বার মধ্যে হেপাটাইটিস বি পাওয়া গেছে। এছাড়াও শিশু ও প্রাপ্ত বয়স্কসহ সব বয়সের রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১১ শতাংশ শরণার্থীর মধ্যে হেপাটাইটিস সি এবং ৪ শতাংশের মধ্যে হেপাটাইটিস বি পাওয়া গেছে।
হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত অন্তঃসত্ত্বা নারীর অজান্তেই তাদের সন্তানের শরীরে ভাইরাস পরিবহন হয়। মানুষ নীরবেই হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে ভোগে। দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজারে অবস্থানের কারণে রোহিঙ্গাদের মধ্যে এই ভাইরাসে আক্রান্তরা স্থানীয়দের জন্য সম্ভাব্য হুমকি
পাঠকের মতামত